শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চেক ডিজঅনার হলেই সাজা নয় বৈধ চুক্তি প্রমাণ করতে হবে

চেক ডিজঅনার হলেই সাজা নয় বৈধ চুক্তি প্রমাণ করতে হবে

স্বদেশ ডেস্ক:

চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনো বৈধ চুক্তি প্রমাণ করতে না পারলে এখন থেকে চেক ডিজঅনার হলেই সাজা হবে না মর্মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। এ রায়ের ফলে এখন থেকে বাদিকেই প্রমাণ করতে হবে কী চুক্তিমূলে বা বিবেচনায় চেকদাতা চেক ইস্যু করেছিলেন এবং সেই চুক্তিটি ব্যর্থ হয়নি যার কারণেই বিবাদির কাছে বাদির পাওনা বলবৎ রয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর সম্প্রতি ২০ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

গতকাল বুধবার এ মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ রায় প্রকাশের বিষয়টি জানান।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ বলেন, আগে চেক ডিজঅনার হলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চেকদাতার সাজা হতো। চেকমূলে চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনো কারণ রয়েছে কি না, সেটি দেখার বাধ্যবাধকতা বা দিকনির্দেশনা ছিল না। এখন থেকে চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে চেকদাতা ও চেকগ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনো বৈধ চুক্তি ছিল। চেক প্রাপ্তির বৈধ কোনো কারণ প্রমাণ করতে না পারলে এখন আর চেকদাতার সাজা হবে না।

তিনি আরো বলেন, আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে চেকের বৈধ বিনিময় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে হবে। চেকের বৈধ বিনিময় প্রমাণে ব্যর্থ হলে চেকের মামলায় কোনো ব্যক্তিকে সাজা নয়। এ রায়ের ফলে চেকদাতারা তাদের নির্দোষ প্রমাণের একটা সুযোগ পেল। এ ছাড়া এ রায়ের ফলে চেক সংক্রান্ত মামলায় বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও হয়রানি কমবে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত এক আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ছোট ভাই, সাবেক কূটনীতিক কায়সার রশিদ চৌধুরীর স্ত্রী (মৃত) সামছি খানমের মালিকানাধীন নর্থ গুলশানস্থ ৩০ কাঠা জমি ১৯৭৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত ইজারা চুক্তি মূলে আমেরিকান দূতাবাসকে ১১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। যেহেতু ওই ইজারা চুক্তিটি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) করা হয়নি এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত সামছি খানমের উত্তরাধিকারী- ইমরান রশিদ চৌধুরী, পারভেজ রশিদ চৌধুরী ও জিনাত রশিদ চৌধুরী জমিটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পেরে আবুল কাহের শাহিন নামে এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন এবং জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য তথা ১৫০ কোটি টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা রয়েছে এবং তিনি তা বিক্রি করে দিতে পারবেন। ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ শাহিনের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। এ চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তৎকালীন বাজারমূল্যে জমিটি বিক্রি করে দেবেন এবং তার জন্য শাহিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৩ শতাংশ টাকা পাবেন। তখন ইমরান রশিদ চৌধুরী পোস্ট ডেইটেড ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনের নামে ইস্যু করেন। কিন্তু ৯০ দিন পার হওয়ার পরও শাহিন তৎকালীন বাজারমূল্যে কোনো ক্রেতা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট জমিটির ইজারা গ্রহীতা আমেরিকান দূতাবাসের সাথে মালিকরা একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩ জুলাই বিক্রয়পূর্বক দলিল সম্পাদন করেন। এরপর শাহিনকে চেকগুলো ফেরত দিতে বলেন।

এ দিকে আবুল কাহের শাহিন ওই পোস্ট ডেইটেড চেক চারটি ফেরত না দিয়ে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার ফন্দি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি চেক চারটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। ইতোমধ্যে ইমরান রশিদ চৌধুরী শাহিনকে দেয়া চেকগুলো সম্পর্কে ব্যাংকে ‘স্টপ পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন’ দিয়ে রাখলে সেগুলো যথারীতি ডিজঅনার হয়। তারপর শাহীন সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করে তার পক্ষে রায় পান।

ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট রায় দেয়ার মাধ্যমে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন। এতে আবুল কাহের শাহিন ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই আপিল (আপিল নং ৬৩/৬৪/৬৫/৬৬/২০১৭) খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877